এম.এ রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে এস আলম গ্রুপ কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর থেকে ব্যাংকের সেবার মান ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে – এমন অভিযোগ তুলে বগুড়ার ধুনটে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় ধুনট উপজেলার ইসলামী ব্যাংক শাখা কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রভাষক আতাউর রহমান, আব্দুল্লাহেল বাকী, মুজাহিদুল ইসলাম মিঠু, তরিকুল ইসলাম, আবুল কাসেম, গোলাম ফারুক, লিটন মিয়া ও সজিব আহমেদসহ স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
বক্তারা বলেন, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর গত কয়েক বছরে ব্যাংকটিতে অদক্ষ, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত প্রায় ৮,৩৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের অনেকে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষার মাধ্যমে নয়, বরং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এসব নিয়োগপ্রাপ্তদের কেউ কেউ পানের দোকানদার, গৃহকর্মী, অটোচালক ও মিস্ত্রির সহকারীর মতো পেশা থেকে এসেছেন, যাদের ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। অনেকেই ভুয়া শিক্ষাগত সনদ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন এবং এদের মধ্যে কিছুজনকে ইতোমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে। এখনো ভুয়া সনদ যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে দক্ষতা যাচাইয়ে একটি বিশেষ পরীক্ষার আয়োজন করা হলে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা তাতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। বরং তারা সংবাদ সম্মেলন, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার এবং হুমকি-ধামকির মাধ্যমে ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এমনকি ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাক করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
সূত্র আরও জানায়, এসব নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আগত এবং তারা অফিস চলাকালীন নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন, যা ব্যাংকের গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অদক্ষতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণে গ্রাহকসেবার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, এস আলম গ্রুপের ছত্রচ্ছায়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা করছেন, সহকর্মীদের হয়রানি করছেন এবং নিজেদের ইচ্ছামতো পোস্টিং আদায় করছেন। কেউ তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করলে, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে চাকরির হুমকি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে ব্যাংকের অনেক শাখা ব্যবস্থাপক ও জোনাল হেড আতঙ্কে রয়েছেন।
সূত্রমতে, এসব অনিয়ম ও অদক্ষ নিয়োগের কারণে ব্যাংকটির বাৎসরিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১,৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, এবং গত ৭ বছরে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পাশাপাশি, এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে এমন অদক্ষ ও অনৈতিক নিয়োগ ব্যবস্থা, শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দুর্নীতির অভিযোগ দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। তারা অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত, দোষীদের বিচারের আওতায় আনা এবং ব্যাংকের সেবার মান পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

