স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১২ই ফেব্রুয়ারি) মেলায় লাখো মানুষের উপচে পড়া ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে প্রতিবছরের মতো এবছরেও বৃহস্পতিবার ত্রি-মহিনী পশ্চিম মহিষাবান গ্রামে হবে বউ মেলা। এ মেলায় শুধু মেয়ে নববধূঁ’রাই ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করেছে। উপভোগ করেছেন নানা ধরনের বিনোদন ও খেলা। মেলায় বিক্রি হয়েছে কয়েক হাজার মন মাছ ও মিষ্টি।
মাছের দাম কিছুটা চড়া হলেও বিক্রি হয়েছে বড় বড় চিতল, বি-গ্রেড, ভেউস, বোয়াল, রুই ও
কাতলা’সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশী-বিদেশী মাছ। হিন্দু-মুসলমান ও পুরুষ-নারীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের ঢল নেমে ছিল ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায়। তবে মেলায় বাঘাইড় মাছ কম পাওয়া গেলেও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বড়-বড় অসংখ্য মাছ ছিল।
এরমধ্যে মেলায় ভেউস মাছ কেজি প্রতি বিক্রি করা হয় ১হাজার ৫শ থেকে ২হাজার টাকা, পাখিমাছ প্রতি কেজী বিক্রি হয়েছে ১৫শত থেকে ২হাজার টাকা, বোয়াল মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ৮শ থেকে ১হাজার টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ৮শ থেকে ১হাজার ৫শত টাকা, কাতলা মাছ
কেজি প্রতি বিক্রি করা হয় ৭শ থেকে ১৫শত টাকা, সিলভার-কাপ প্রতিকেজী ৭শ থেকে ৯শত টাকা, আরকাটা প্রতিকেজী ২২শত থেকে ২৫শত টাকা, ব্রি-গ্রেড প্রতিকেজী ৫শত থেকে ৮শত টাকা, ক্লাস-কাপ প্রতিকেজী ৫শত থেকে ৯শত টাকা। এছাড়া বিভিন্ন রকম মাছ নানা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। শেষ পর্য়ন্ত ১থেকে ২কোটি টাকা মাছ বিক্রি আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ হলো বাঘাইড় মাছ। নিষিদ্ধ থাকায় মেলায় ছোট- ছোট বাঘাইড় মাছ গোপনে কমসংখ্যক কেনা-বেচা হয়েছে। স্থানীয় সন্ন্যাসী পূর্জা উপলক্ষে ৪শত বছর পুরানো এ মেলায় ছিল প্রশাসন কঠোর নজরদারী।
মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা ষ্ট্রীল র্ফানিচার, বড়ই (কুল) ও কৃষি সামগ্রী বিভিন্ন আসবাবপত্র এবং খাদ্য-দ্রব্য হাট-বাজারের ন্যায় কেনা-বেচা করা হয়েছে। এছাড়া বিনোদন মূলক ছিল সার্কাস, মোটর সাইকেল খেলা, নৌকা খেলা ও নাগোরদোলা এবং শিশু জন্য দোলনা।
উল্লেখ্য, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের অর্ন্তগত গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্নে প্রায় ৪শত বছরপূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূর্জা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সর্ম্পন্ন ব্যক্তি মালিকানা জমিতে ১দিন জন্য মেলাটি বসে। দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করেছে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ী আত্বীয়-স্বজনরা এসে সমবেত হয়েছে। ঈদ বা কোন উৎসবে জামাই-মেয়ে অন্যান্য আত্বীয়-স্বজন’কে দাওয়াত না দিলেও তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে যা রেওয়াজে পরিনীত হয়েছে। মেলাটি ১দিন জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলা আমেজ থাকে ১সপ্তাহ ব্যাপী।
আত্বীয়- স্বজনদের আপ্যায়ন করতে মেলার আশপাশের গ্রামের অসংখ্য বাড়ীতে নানা আয়োজনের ধুম পড়ে গেছে। মেলা উপলক্ষে খরচার জন্য নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার বছরের শুরু থেকেই মাটির ব্যাংক অথবা অন্য কোথাও সুজুগ মতে অল্প-অল্প করে টাকা-পয়সা জমা (সঞ্চয়) রেখে এ মেলায় খরচ করে থাকেন।
এই মেলাকে ঘিরে উপজেলার দুর্গাহাটা, বাইগুনি, সুবাদবাজার, দাড়াইল বাজারসহ আরো কয়েকটি স্থানে ছোট-ছোট মেলা বসানো হয়েছে। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মন্ডল পরিবার মেলা পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলা লাইসেন্স দেয়া হয়। এবারও মেলাটি পরিচালনায় এবং নেতৃত্বে ছিলেন মন্ডল পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডল। বাংলা প্রতিবছরের মাঘ মাস শেষ অথবা ফাল্গুন মাস প্রথম বুধবার মেলাটি উদযাপিত হয়েছে। কিছু সমস্যা কারনে গত ২/৩ বছর হলে একটু দুরে মেলা হলেও এবারে মূল জায়গায় মেলাটি বসানো হয়েছিল।
এ ব্যাপারে মন্ডল পরিবারের সদস্য এবং মেলার পরিচালক ও মহিষাবান ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডল জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলাকে ঘিরে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে জেন মিলন মেলা। প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় শান্তিপূর্ন ভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী পূর্জা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি নিকুঞ্জ কুমার পাল জানান, শতশত বছর আগে থেকে সন্ন্যাসী পূর্জা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা উদযাপন হয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এবছরেও শান্তিপূর্ণভাবে ৪৫৩ তম মেলাটি অনুষ্ঠিত হলো।
গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে মেলার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। ফলে সকলের সার্বিক সহযোগিতায় মেলাটি অত্যান্ত শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গাবতলী মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিক ইকবাল জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পোড়াদহ মেলায় আইন-শৃঙ্খলার বাহিনী সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল।
অপরদিকে, পোড়াদহ মেলা শেষে বৃহস্পতিবার মহিষাবানে বউ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। শুধু তরুণী-মেয়ে-স্ত্রী জন্যই হবে এই ‘বউ মেলা’। এই মেলায় পুরুষ প্রবেশ নিষেধ থাকায় তরুণী- গৃহবঁধু সববয়সের মেয়েরা স্বাদছন্দে মতে কেনাকাটা করবে। প্রায় ৩০বছর পূর্বে থেকে ‘বউ মেলা’ হয়ে আসছে।

