স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় একজন উপসচিব ভিলেজ পলিটিক্সের শিকার হয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। একজন উপসচিবকে নিয়ে মহল বিশেষের অপপ্রচারে বিস্মিত এলাকার মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে তাঁর গ্রামের বাড়ি ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা গ্রামে। সেখ্যানে একটি দাখিল মাদরাসা ও মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে এডভোকেট রেজানুর ইসলাম ঠান্ডুর নেতৃত্বে একটি মহল দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে বহুদিন থেকেই। এ ঘটনায় ধুনট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তারা গত ৬ ও ১১ আগস্টে মসজিদে হামলা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবারও রেজানুর ইসলাম ঠান্ডুর নেতৃত্বে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে যোগসাজসে মসজিদে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলার সময় মসজিদের ভেতর উপ-সচিব খান মো. নাজমুস শোয়েব, তার চাচা মসজিদের সভাপতি অধ্যক্ষ খান কুদরত-ই-সাকলায়েন সহ অন্যান্য মুসল্লিরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে উপসচিব স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা চাইলে স্থানীয় জনসাধারণ, বিএনপি নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় প্রশাসন অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেন।
চার বছর আগে গ্রামের মানুষের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নিজের জমি দান করে তিনি মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং গ্রামবাসীর সহায়তা কামনা করেন। তবে শুরুতেই নানা জটিলতা ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন তিনি।
শুরুতে মসজিদের নির্মাণ কাজ দেখাশুনা করার জন্য খাজান উদ্দিন খানের ছেলে ঠান্ডু, রাশেদ, রায়হান এবং তাদের ভাতিজা আনোয়ারুল ও নয়নকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু তারা মসজিদের অর্থ নানা ভাবে অনিয়ম করায় তাদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদের বিরোধীতা শুরু করে এবং ইমাম নিয়োগে বাধা দেয় এবং ৬০-৭০ গজ দূরে আরেকটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করে। শুধু তাই নয় নানাভাবে হামলা ও মুসল্লীদের মসজিদে আসতে বাধা দেয় ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পুরোনো মসজিদের আজানের শব্দে নতুন মসজিদের পক্ষ বিরক্তি প্রকাশ করে এবং মাইক ব্যবহার না করার দাবি তোলে। এমনকি, নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য চাঁদা দাবির অভিযোগও ওঠে। পাঁচ আগস্ট তারিখে নতুন মসজিদের ইমামকে প্রতিপক্ষের লোকজন জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। মুলত ওই মহলটি উপসচিবের পারিবারিক ঐতিহ্য ঈর্ষান্বিত হয়ে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে গত ২৪ ডিসেম্বর বিশ্বহরিগাছা গ্রামে উপসচিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে একটি মানববন্ধন করে।
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে, উপসচিব ও তার ভাই গ্রামের বাড়িতে এলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং তাদের কাছে থাকা মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাখা এক লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক ছিল যে তারা মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ধুনট থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও এখনো সেটি রেকর্ড হয়নি বলে দাবি করেন উপসচিব।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বিশ্ব হরিগাছা গ্রামের বাসিন্দা ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জনাব খান মো. নাজমুস শোয়েব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও আমি মাদরাসা ও মসজিদের কোনো দায়িত্বে সম্পৃক্ত নই। কাজেই আমার বিরুদ্ধে ডকুমেন্টবিহীন কথিত প্রপাগান্ডা ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অসৎ উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং ব্যক্তিগত আক্রশমূলক।
উপসচিব এ ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন,”আমি গ্রামের উন্নয়ন ও ধর্মীয় কাজে অবদান রাখার জন্য কাজ করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হব, তা কখনো ভাবিনি। প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতাদের কাছে অনুরোধ, যেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদের ভেতর সরকারী ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাকে শুধুমাত্র ব্যক্তি ঈর্ষা ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অবরুদ্ধ করে লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন এলাকার আপামর জনতা। গ্রামে এ ধরনের সংঘাতের কারণে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন পারিবারিক আধিপত্য এবং পূর্ব দ্বন্দের জেরেই এমন ঘটনার সৃষ্টি। তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং দ্রুত সমাধান করা হবে।

