দিনাজপুরের বিরামপুরে রমজানের প্রথম সন্ধায় জমজমাট ৪০০ বছর পর চন্দ্র-শুক্রের মহাজাগতিক মিলনের দৃশ্য খালি চোখে দেখা যায়। মহাকাশে প্রতিনিয়ত নানা ঘটনার দেখা মেলে। কখনও উল্কায় উল্কায় সংঘর্ষ,কখনও আবার সৌরঝড়,রঙিন ধূমকেতুও আকাশ রাঙিয়ে তোলে কোনওসময়। এবার তেমনই এক ঘটনা ঘটল। কাকতালীয় নয় একেবারেই। তবে খুব একটা এমন দৃশ্য দেখাও যায় না। বিকেলের পরপশ্চিম আকাশে তাকাতেই দেখা যায় একই লাইনে রয়েছে চাঁদ,বৃহস্পতি,শুক্র।
এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদ ও শুক্রকে একই সরল রেখায় দেখতে পাওয়াটা অত্যন্ত বিরলতম একটি ঘটনা ৷ উল্লেখ্য সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে চাঁদ ও শুক্র কাছাকাছি চলে আসে,এমন ঘটনা কমপক্ষে ৪০০ বছর ছাড়া দেখতে পাওয়া যায় ৷
চাঁদ পৃথিবীকে পদক্ষিণ করতে করতে ক্রমশ পূর্বদিকে সরে যায় ৷ এরফলে আড়াল হয়ে যায় শুক্র। একই সরলরেখায় চাঁদ ও শুক্র এসে পড়ে,তাবেই চাঁদের আড়ালে শুক্রকে ঢাকা পড়তে দেখা যায়। চাঁদের এরকম অন্য মহাজাগতিক বস্তুকে ঢেকে দেওয়াকে বলা হয় চাঁদের আড়াল বা Lunar Occultation ৷
কলকাতার আকাশে শুক্রকে চাঁদ ঢেকে দিয়েছে বিকেল ৪:৪৩,ফলে সূর্যের উপস্থিতি দেখার ক্ষেত্রে বাধ সেধেছে। শুক্র চাঁদের আড়াল থেকে,বেরোতে বেরোতে বেজে গিয়েছে সন্ধে ৬টা,তারপর থেকেই পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ অনুকূল সময় অনুভূত হয়েছে।
একসঙ্গে তিন জ্যোতিষ্ককে দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন মহাকাশপ্রেমীরা। বহুদিন পরে রাতের আকাশে কাছাকাছি আসতে দেখা গিয়েছে পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী বৃহস্পতি ও শুক্রকে। এর আগেই জানান হয়েছিল,দুই গ্রহ এবং এক উপগ্রহ এরা পয়লা মার্চ সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে। আজ পশ্চিম আকাশে তাকালেই যে দুটি বিন্দু সবচেয়ে উজ্জ্বল তা হল শুক্র-বৃহস্পতি। সন্ধ্যাতারাকে (শুক্রগ্রহ) প্রতিদিনই আকাশে দেখা যায়। তবে বৃহস্পতির সঙ্গে এক সারিতে দেখার সুযোগ হয় না।
সৌরজগতের সবথেকে উষ্ণ গ্রহটি হল, শুক্র। সৌরজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল গ্রহ-ও এটি। যা শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা নামেও পরিচিত। সেই শুকতারাকে এবারে চাঁদের কাছাকাছি আসতে দেখা গেল। খোদ শুক্রবারেই শুক্রের এহেন মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী থাকল কলকাতা। বিশ্বের সবথেকে খতরনাক অস্ত্র ভ্যাকুয়াম বোমা, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে একটা গোটা মানুষ।
কয়েকদিন আগেই কাছাকাছি এসেছিল শুক্র এবং বৃহস্পতি গ্রহ। আর এদিন সূর্য ডুবতেই অর্ধ চাঁদের ঠিক নিচেই দেখা গেল সন্ধ্যাতারাকে। উজ্জ্বল একটি বিন্দু। ক্রমে বিন্দুটিকে কিছু সময়ের জন্য ঢেকে দেয় চাঁদ। কলকাতার অনেক জায়গা থেকেই দেখা গেল এই দৃশ্য। দৃশ্যটি দেখার ধুম পড়ে যায় শহরবাসীদের মধ্যে। অনেকেই নিজের মোবাইল ফোনে এই মহাজাগতিক দৃশ্য বন্দি হয়ে যায়।
মহাকাশ বিশেষজ্ঞ দেবীপ্রসাদ দুয়ারির কথায়, “শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে চাঁদের নিচে এক উজ্জ্বল তারাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটি তারা নয়। এটি শুক্র গ্রহ। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে অনেক সময় গ্রহগুলি পরস্পর কিংবা চাঁদের সঙ্গে একই রেখায় চলে আসে।” তিনি শুক্রকে চাঁদের ঢেকে দেওয়া প্রসঙ্গে জানান, “মনে হচ্ছিল যেন শুক্রের গ্রহণ হয়েছে।”শুক্র গ্রহকে নিয়ে এমনিতেই বিশেষজ্ঞদের কৌতূহল তুঙ্গে। সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ হলেও শুক্র সৌরজগতের উষ্ণতম গ্রহ। যা আকারে পৃথিবীর কাছাকাছি। ফলে একে পৃথিবীর জমজ গ্রহ-ও বলা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়। একদল বিজ্ঞানীর দাবি,শুক্র উষ্ণতম গ্রহ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। কারণ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে যে মেঘ রয়েছে,অ্যামোনিয়াম সল্ট রয়েছে তাতে। যা জীবন সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উপাদান।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ মিন্টু ইসলাম
Mintuislam59@gmail.com
ইপেপার