এম,এ রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকায় রয়েছে বগুড়ার আদমদীঘির সাওইল বাজার। শীতের আগমনে সরগরম হয়ে উঠছে শীতবস্ত্র চাদর ও কম্বল বেচা কেনার হাটবাজার। বেচা কেনা শুরু হয়েছে এই হাটে । শীত যতই ঘনিয়ে আসছে সাওইলের কারিগররা ততই কম্বল চাদরসহ শীতবস্ত্র তৈরীতে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। এখন আর আগের মত শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে তাঁত মেশিন চালাতে হয়না, হাত ও পা চালিত মেশিনের পরিবর্তে এখন যান্ত্রিক মেশিনে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় বদলে গেছে এখানকার তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠান। শতশত পরিবার এই পেশায় এখন সাবলম্বী হয়েছে।
আদমদীঘি উপজেলা সদর হতে মাত্র ৭ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত সাওইল বাজার।
এই বাজারে প্রতি বুধবার ও রবিবার হাট বসে। তাঁত শিল্পকে ঘিরে সাওইলসহ কেশরতা, বিনাহালী, মঙ্গলপুর, মুরইল, পুশিন্দা. দেলুঞ্জ, মুরাদপুর, ছাতনিসহ প্রায় ৭৬ গ্রামে তাঁত শিল্প রয়েছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির ডামাডোলে সুতার দাম, কাঁচা মাল ও রংয়ের দাম বৃদ্ধির কারনে তৈরী শীতবস্ত্র বিক্রি করে এখন আর তেমন লাভবান হচ্ছেনা তাঁতিরা। তাই অনেকেই এই পেশা কোন রকমে ধরে রেখেছে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এই তাঁতি গোষ্ঠী আজও ধরে রেখেছে তাঁত সংস্কৃতি। তাঁত শিল্পকে ধরে রাখতে হলে সরকারী পৃষ্টপোষকতা দেয়া প্রয়োজন বলে তাঁত, সুতা ও কম্বল চাদর ব্যবসায়ীর সভাপতি আতোয়ার রহমান, জাহিদ,শামছুদ্দিন,মতিয়ার রহমান,আসমা বেগম, ফিরোজসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বাজার জুমলেও সুতাসহ কাঁচা মালের দাম শ্রমিক মজুরি বেশির কারণে এবার তৈরী কম্বল চাদরের দাম কিছুটা বেশি।
তবে বেচাকেনা শুরু হলেও পাইকারদের আগমন কম। শীত চাপলে পাইকার আসতে শুরু করলে পুরোদমে বেচাকেনা হবে বলে আশা রয়েছে। সাওইল গ্রামে অনেক আগে থেকেই তাঁতি শ্রেনীর মানুষের বসবাস। যার কারনে শাওইল গ্রামে তখন থেকেই এক ভিন্নধর্মী হাটবাজার গড়ে উঠে। যার মুলে রয়েছে শীতের চাদর কম্বল গামছা ও উলের (উলেন) সুতা। এই হাটের জনপ্রিয়তা দেশ বিদেশে রয়েছে। এখানে প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার ভোর রাত থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত চলে হাটবাজার। এ হাটকে ঘিরে প্রায় ৭৬ গ্রামে গড়ে উঠেছে তাঁতি পল্লী। তারাই কম্বল কেন্দ্রিক এ শিল্পের এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। যখন সাওইলের হাট বসে তখন দেখতে মনে হয় যেন মেলা বসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ীদের পদচারনায় মুখরিত হয় সাওইল গ্রামের পথঘাট। রাজধানী ঢাকা চিটাগাং সিলেট খুলনা দিনাজপুর রংপুর রাজশাহী সহ সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এসে চাদর কম্বল ও উলেন সুতা কিনে ট্রাক যোগে নিয়ে যান। এখানকার তৈরী চাদর ও কম্বল বিদেশেও রপ্তানী হয়ে থাকে। এ পেশায় ২০ হাজারের অধিক পরিবার সাবলম্বী হয়েছে। সাওইল হাটবাজারে দোকান রয়েছে ছোট বড় মিলে প্রায় ৯ শতাধিক ।
ব্যবসাায়ী ও সাবেক ইউ.পি সদস্য উজ্জল হোসেন জানান, এখানকার তৈরী আকর্ষণীয় চাদর কম্বল ও গামছা অত্যন্ত উন্নতমানের ও কম দামে পাওয়ায় দেশ বিদেশে চাহিদা বেড়েছে। কোন ধরনের প্রচার ও সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল এই কর্মক্ষেত্র। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মালামাল বেচাকেনা হলেও অদ্যবধি এখানে কোন ব্যাংক স্থাপন হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা টাকা নিয়ে সর্বদা নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন যেতে হয় দুই কিলোমিটার দুরে মুরইল বাজার ব্যাংকে।