এম,এ রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলা মাসের জ্যৈষ্ঠকে বলা হয় ফলের মধুমাস। জৈষ্ঠ্যমাস শেষ হলেও চারদিকে মৌসুমী ফলে এখনো কিন্তু বাজার ছেয়ে আছে। আর এসব মিষ্টি ফলের গন্ধের প্রতিযোগিতায় সব ফলকে বিলুপ্তিতায় ফেলে এখন এগিয়ে জাতীয় ফল কাঁঠাল। এমন চিত্রই মিললো কাঁঠালে ভরপুরে জমে উঠা বগুড়ার মহাস্থান। দেশের কাঁঠাল উৎপাদনকারী অনেক অঞ্চলের নাম শোনা গেলেও এর মধ্যে মহাস্থান অন্যতম। এখানে আশেপাশের বগুড়া, জয়পুহাট, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলা থেকে কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল আমদানি করেন। তবে এবার কাঁঠালের আমদানি অনেক কম হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আগে মহাস্থানের আমদানিকৃত কাঁঠাল প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ ট্রাক দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হতো।
সে হিসেবে এবার কাঁঠালের আমদানি কম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তারপরেও আশানুরূপ ভাবে প্রতিদিনই মহাস্থান হাটে কাঁঠালের আমদানি ব্যাপক। বুধবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাস্থান হাটের আগের দিনেই পাইকাররা ভিড় জমায় এখানকার কাঁঠাল হাটে। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ হাটে কাঁঠাল কেনাবেচা হয়। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার উজগ্রাম থেকে এনামুল হক ৩২ টি কাঁঠাল নিয়ে অটোভ্যান যোগে মহাস্থান হাটে বিক্রি করতে এসেছে। তার ৩২টি কাঁঠালের দাম হাকানো হয়েছে ২৫৬০ টাকা। শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলার আজিজার রহমান তার গাছের বাছাইকৃত ২৭টি কাঁঠাল ২৪৩০ টাকায় বিক্রি করলেন। উপজেলার চন্ডিহারা এলাকার মহাস্থান হাটের পাইকা তরিকুল ইসলাম বলেন, কেবল কাঁঠালের আমদানি শুরু।
তিনি প্রতিদিন ১ ট্রাক কাঁঠাল ক্রয় করে সিলেটে মোকামে পাঠান। এ হাটে আসা সবচেয়ে বড় ১৬টি কাঁঠাল তিনি ১৮০০ টাকা দরে কিনলেন। ভ্যানবোঝাই করে মহাস্থান হাটে কাঁঠাল নিয়ে আসা আরেক ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া জানান, প্রতিদিন তারা গ্রাম-গঞ্জ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে মহাস্থান হাটে বিক্রি করে থাকেন। প্রতি পিস কাঁঠাল সাইজ অনুসারে ৮০টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। মহাস্থান হাটে কাঁঠাল যাচ্ছে কুমিল্লা, সিলেট, চট্রগ্রাম লাকসাম, নোয়াখালী ও সাতক্ষীরা। এদের মধ্যে সিলেট থেকে আসা পাইকার আল আমিন জানান, এই এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালের চাষ হয়। তাই মৌসুম জুড়ে অনেক কাঁঠাল পাওয়া যায় বলে সিলেট থেকে এসে অথবা সহকারীদের মাধ্যমে ট্রাক ভর্তি করে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান। বগুড়া চেম্বার অব কমার্মে সদস্য ও বিশিষ্ট আড়ৎ ব্যবসায়ী মাহিম ও মুক্তি ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী রহেদুল ইসলাম জানান, দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে বেপারীরা মহাস্থানহাটে কাঁঠাল কিনতে আসেন।
এরা আগের দিনে বিভিন্ন আড়ৎ, আবাসিক হোটেলে থাকেন। তারা আমাদের মাধ্যমে কমিশনে কাঁঠাল কিনে ট্রাক লোড দিয়ে মোকামে যান। মহাস্থান হাট থেকে কিনে তাদের এলাকায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। মহাস্থান কাঁঠালের আমদানির কারনে আড়ৎ ব্যবসায়ী, লেবার শ্রমিক, কাঁঠাল পরিবহন অটোভ্যান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুফল ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, মহাস্থান হাটে সবচেয়ে কাঁঠাল বিক্রির সুবিধা হলো এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। আমদানিকৃত কাঁঠাল গভীর রাত হলেও ক্রেতা বিক্রিতাদের কোন অসুবিধা হয় না।