এম,এ রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এবছর বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৭ লাখ ৩৫ হাজার পশু। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে জেলায় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলাতে বিক্রি হতে পারে এসব পশু। একই সাথে বেড়েছে খামারীর সংখ্যাও। ঈদকে ঘিরে খামারীরা এখন লাভের আশায় দিন গুনছেন। এদিকে বগুড়ায় কোরবানি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুতকৃত পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলায় ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন খামারিসহ ব্যক্তি পর্যায়ে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। গত বছর বগুড়ায় ৪৪ হাজার ৩২৯জন খামারী ছিলেন। জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য করে তোলা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি গবাদিপশু। আর গত বছর ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৭টি। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু ২ লাখ ৭০ হাজার ৪১ টি, ছাগল ৪ লাখ ২২ হাজার ৬৫৭টি, ভেড়া ও গারল ৩৯ হাজার ৮৫১টি এবং মহিষ ২ হাজার ২৬৬টি। প্রস্তুতকৃত পশুর সাথে এবার বেড়েছে কোরবানির পশুর চাহিদাও। গত বছর পশুর চাহিদা ছিল ৭ লাখ ৪ হাজার ৪৬০টি। চলতি বছর জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুতকৃত পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৯ হাজার ১৫৫টি।
জানা যায়, বগুড়ার ১২টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩হাজার ৮৮৫ জন খামারি, শেরপুর উপজেলার ৬ হাজার ৮৩৭ জন খামারি, ধুনটে ৪ হাজার ৩৯৭ জন খামারি, নন্দীগ্রামে ২ হাজার ৫৫১ জন খামারি, সারিয়াকান্দিতে ৫ হাজার ৫০৩ জন খামারি, সোনাতলায় ৪ হাজার ১৭৭ জন খামারি, শিবগঞ্জে ১ হাজার ৩৬৫ জন খামারি, কাহালুতে ২ হাজার ৯৪৯ জন খামারি, দুপচাঁচিয়ায় ৫হাজার ৮৩০ জন খামারি, আদমদীঘিতে ২ হাজার ৪৫৩ জন খামারি, গাবতলীতে ৩ হাজার ২৪৯ জন খামারি ও শাজাহানপুর উপজেলায় ৫ হাজার ২৫৭ জন খামারি রয়েছে। ওষুধের দাম ও গো-খাদ্যের অতিরিক্ত দামের কারণে প্রস্তুতকৃত পশুর প্রত্যাশিত দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা। এদিকে কোরবানির পশুর দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সংকটে পড়বেন মধ্যবিত্ত কুরবানিরদাতারাও। সবমিলে চলতি বছরের কোরবানির পশু প্রস্তুতকারী খামারি ও কোরবানি দিতে আগ্রহী ব্যক্তিরা বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায্য মূল্যের আশা করছেন। বগুড়া জেলায় প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়েই অষ্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ান, আমেরিকার ব্রাহমা ক্রস, ভারতীয় শাহীওয়াল, নেপালের গীর সহ দেশীয় জাতের গরু ছাগল পালন করে এখন ভালো দামের প্রত্যাশা করছেন খামারীরা। প্রতিবছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে ৪ মাস যাবত অনেকেই গরু মোটাতাজা করে থাকেন।
খামারিরা বলছেন, চলতি বছর পশুখাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় পশুপালন খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে করে কোরবানীর পশুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। বগুড়া সদর উপজেলার দোবাড়িয়া গ্রামের খামারি ফারুক আহম্মেদ জানান, ২০১৭ সালে ৪টি গরু ও ৬টি ছাগল দিয়ে খামার শুরু করেন তিনি। এরপর প্রতি বছর তার খামারে গবাদিপশু বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার খামারে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ৪৫টি ও ছাগলের সংখ্যা ৬২টি। তিনি ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, নেপালী গীর ও দেশী ষাঁড় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। খামারে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা থেকে সর্বনিম্ন দেড় লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। ছাগলের মধ্যে রয়েছে যমুনা পরী, তোতা পরী, হরিয়ানা ও দেশী ব্লাক ব্যাংঙ্গল। যা প্রকার ভেদে মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া দেশী জাতের ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যেগুলোর মূল্য ২০ হাজার টাকা করে। কোরবানির পশু ছাড়াও তার খামারে রয়েছে ৪টি দুধেল গাভী। যেগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০লিটার দুধ পান। ৬ জন শ্রমিক তার খামার দেখাশুনা করেন। প্রতি মাসে তার খামারে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তিনি বছর শেষে আয় করেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। তিনি নিজেকে সফল খামারি মনে করছেন। তবে চলতি বছরে পশুর খাবার থেকে শুরু করে ওষুধসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে।
আসন্ন কোরবানিতে তিনি পশুর ভালো দাম পাবার আশা করছেন। বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোছাঃ নাছরীন পারভীন জানান, গত বছরের চেয়ে বগুড়ায় প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এবছর জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে প্রস্তুতকৃত কোরবানির পশুর উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৯ হাজার ১৫৫টি। আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বগুড়ায় পশু প্রতিপালনের হার বেড়েছে। জেলায় কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না। এছাড়া বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যেন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার না করেন সেজন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমরা খামারীদের এই গরমে পশুদের হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচাতে সব ধরণের পরামর্শ প্রদান করছি। বাজারে দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি থাকলে খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন।