দৈনিক প্রাণের শহর বিডি ডেস্ক:
সুস্থ – সুন্দর নখ মেয়েদের জন্য অলংকারের মতো। তারা এটাকে সুন্দর করে পেইন্ট করে, শেইপ করে। তাই নখে কোনো সমস্যা হলে পুরো হাতের সৌন্দর্যটাই চলে যায়। নখের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। নখের নিজস্ব কিছু অসুখ রয়েছে, যেটা নখেই হয়। এছাড়া ত্বকের কিছু অসুখ আছে, যার প্রভাব নখে পড়ে। নখের বিভিন্ন সমস্যা ও এর প্রতিকার নিয়ে লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট ডার্মাটোলজিস্ট ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন।
জীবানু ঘটিত রোগ :
#খুব প্রচলিত একটি রোগ অনাইকোমাইকোসিস। এটি ফাঙ্গাস দ্বারা হয়। প্রথমে সাধারণত এর কোনো লক্ষণ থাকে না। তাই রোগী কোনো অভিযোগ করে না। দেখা যায়, নখের রং বদলে যাচ্ছে।তখন দেখতে খারাপ দেখাচ্ছে, এটি ভেবে রোগী আসতে পারে। রংটা একটু হলুদাভ হয়ে যায়। নখ পুরু হয়ে যায় (ফ্লেক আসতে পারে)। পরবর্তীকালে যখন লক্ষণ প্রকাশ হয়, তখন রোগীর দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত করে। অনাইকোমাইকোসিস চার রকমের হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো ডিসট্রাল লেটেরাল সাবাঙ্গুয়াল অনাইকোমাইকোসিস। যেহেতু এটা ছত্রাক দিয়ে হয়, তাই অ্যান্টিফাঙ্গাল লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি মুখের অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ খেতে হয়। এই ওষুধ সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস মাস খেতে হয়।
#নখের আরেকটি প্রচলিত সমস্যা হলো প্যারোনাইকিয়া। যারা গৃহিণী, খুব বেশি পানির কাজ করছে, থালা-বাসন মাজছে, তাদের এটি খুব বেশি হয়। এটা খুব ব্যথাযুক্ত। তারা অভিযোগ করে, আমার নখটি ডেবে যাচ্ছে। এর চিকিৎসায় একটি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স দিই আমরা। এই সমস্যা ছত্রাকের কারণেও হতে পারে। তখন দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিফাঙ্গাল দিয়ে চিকিৎসা দিই।
নেইল বাইটিং :
অনেকেই আছেন যে দাঁত দিয়ে নখ কাটেন। সাধারণত শৈশব ও কৈশোরে শিশু, কিশোর – কিশোরীদের মধ্যে এটি দেখা যায়। আর কোনো বয়স্কদের মাঝে যদি দেখেন যে দাঁত দিয়ে নখ কাটছেন, তাহলে বুঝে নেবেন যে তার ছোটবেলায় এর অভ্যেস ছিল এবং পরবর্তীতেও অভ্যেসটি রয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টরা নখ ছোট রাখার পরামর্শ দেন। ছোটদের ক্ষেত্রে হাতমোজা পরতে বলেন। অনেক সময় মায়েদেরকে বলা হয় তিতা যুক্ত কোনো খাবারের যেমন করলার রস নখে লাগিয়ে রাখতে। সাধারণত হতাশা, উদ্বিগ্নতা এবং একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য নেইল বাইটিং করতে থাকেন। সেক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এই অভ্যেসটি অনেকখানি কমিয়ে আনা যায়। আপনাকে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যেনো এর প্রভাব না পরে আপনার নখের ওপর।
#আবার ত্বকের সমস্যার কিছু রোগ নখেও হয়, যেমন – সোরিয়াসিস। এটি খুব প্রচলিত একটি রোগ। এরপর আসে আরেকটি রোগ লাইকেন প্ল্যানাস। এই রোগের কারণে ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগে। এগুলো তো গেল ত্বকের বিষয়ে।একটি কথা বলা হয়, নখ শরীরের অবস্থা বলে দেবে। আপনি একজনের নখ দেখে বুঝতে পারবেন তার শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে। লিভার, ফুসফুস ও কিডনি রোগ – সবকিছুরই প্রভাব নখে রয়েছে। সেটাতে নখের আকৃতিও পরিবর্তন হতে পারে। রংও পরিবর্তন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলি, আপনার যদি ফুসফুসের রোগ হয়, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া হয় তখন নখ হলুদ হয়ে যাবে।
#এরপর রয়েছে টেরিস নেইল, নখটি সাদা হয়ে যায়। যারা ক্রনিক লিভার রোগে ভুগছেন, যেমন লিভার সিরোসিস – তাদের ক্ষেত্রে এটি হয়। এরপর রয়েছে হাফ অ্যান্ড হাফ নেইল। একটি অংশ হয়তো সাদাই থাকছে, তবে আরেকটি অংশ বাদামি বা লাল হয়ে যাচ্ছে। যাদের রেনাল ফেইলিউর রয়েছে, তাদের এই সমস্যা হয়। যারা ডায়ালাইসিস করছে অনেকদিন ধরে অথবা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছেন, তাদের এই সমস্যা হয়। নীল নখ মানেই আপনার অক্সিজেনের অভাব রয়েছে।
নখের যত্নে করনীয় :
এখন আমরা মেয়েরা নখের বিষয়ে অনেক বেশি যত্নবান। দেখা যায়, নেইল পেইন্ট করি অথবা কৃত্রিম নখ পরি। কৃত্রিম নখের গ্লু রয়েছে,আর খোলার সময় খুব সতর্ক হতে হবে। অনেক বেশি নেইলপলিশ ব্যবহার করছে, রিমুভার ব্যবহার করছে, গ্লু ব্যবহার করছে। এই কারণেও নখ পাতলা হয়ে যায়। বেশি সাবান ব্যবহার, নেইল পলিশ ব্যবহার করলে নখ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নেইলপলিশ রিমুভারের বিষয়ে খুব সচেতন হতে হবে। রিমুভারটি যেন এসিটোন ফ্রি হয়। কারণ, এসিটোন নখের কিউটিকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। এক্ষেত্রে পণ্য পছন্দের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হতে হবে।
#নখের যত্নের ক্ষেত্রে প্রথমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে প্রথমে আসে নখন কাটার ব্যাপারটি। আরেকটি সমস্যা রয়েছে অনাইকোগ্রাইফোসিস। নখ অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। যদি নখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখি, এসব সমস্যা দেখা দেয়। নখ সাবধানে নেইল কাটার দিয়ে কেটে ফেলতে হবে পরিষ্কার রাখতে হবে। যতবার আপনি হাত ধোবেন, ততবার একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। নারকেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে নখকে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি নখে পুষ্টি জোগাবে।
#আর খাবার – দাবারের বেলাতেই সচেতন হতে হবে। নখ তো কেরাটিন প্রোটিন দিয়ে গঠিত। তাই নখের যত্নে জিংক, প্রোটিন, বায়োটিন এই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কারণ, আয়রনের অভাবে চামচের মতো নখ হয়ে যায়, যাকে কোইলোনাইকিয়া বলে। খাবারে যদি বায়োটিন, জিংক বা আয়রনের অভাব থাকে, তখন নখ পাতলা হয়ে যায়। এর ফলে খুব সহজেই নখ ভেঙে যায়।