এম এ রাশেদ স্টাফ রিপোর্টার
আজ বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বগুড়াসহ সারাদেশে বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ। দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা। লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমী প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় এ দুর্গোৎসবের।
এ বছর দোলায় অর্থাৎ পালকিতে চেপে দেবীদুর্গা মর্ত্যলোকে পদার্পণ করবেন। আবার গজে অর্থাৎ হাতিতে চড়ে কৈলাসে ফিরবেন। পূজার প্রধান উপলক্ষ প্রতিমা তৈরির কাজও প্রায় শেষ। তুলির শেষ আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে দিচ্ছেন শিল্পীরা। পাশাপাশি প্রতিমার শাড়ি, মুকুট, শাঁখা সিঁদুর লাগানো হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে মন্দিরে মন্দিরে পৌঁছে যাবে প্রতিমা। পূজা উদযাপন উপলক্ষে বগুড়া শহরের অলিগলিতে চলছে মন্দিরের প্যান্ডেল বানানোর কাজ।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের নামাজগড় ডালপট্টি, চেলোপাড়া, জলেশ্বরীতলা, ঠনঠনিয়া, দত্তবাড়ী, কালিতলা, চকসুত্রাপুর, সেউজগাড়ী, মাটিডালী, মগলিশপুর, মালতিনগর, শিববাটি ও শহরের সাতমাথা টেম্পল রোডস্থ সনাতন মন্দিরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে দূর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি। চলছে প্যান্ডেল বানানো কাজ। বাঁশ দিয়ে বানানো হচ্ছে প্রতিমা রাখার স্টেজ। লাইটিং করা হচ্ছে এক গলি থেকে অন্য গলি পর্যন্ত।
অন্যদিকে পূজার একদিন আগেও মহাব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা। সরেজমিন গিয়ে দেখে গেছে, প্রস্তুতি প্রায়ই শেষ হয়েছে। শিল্পীরা দেবীদুর্গা, স্বরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মীর গায়ে শেষ আঁচড় দিচ্ছেন। মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজানো শেষে শাড়ি জড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিমার গায়ে। শাখা, সিঁদুর, মুকুট পরিয়ে পরিপূর্ণ রুপ দিচ্ছেন তারা।
শহরের চেলোপাড়ার প্রতিমা শিল্পী কাজল প্রামানিক জানান, কাজ শেষেই আমাদের তৃপ্তি। রথ যাত্রার পর থেকে দিন-রাত এক করে কাজ করেছি। এ বছর ২০টি কাজের অর্ডার পেয়েছি। সবগুলো আজ-কালের মধ্যে পৌঁছে যাবে। এরমধ্যে একটি প্রতিমার কাজ বাকি আছে, আসা করছি সন্ধ্যার পরপরই শেষ করতে পারবো। খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ হচ্ছে খুবই সীমিত। কারিগরদের বেতন দিয়ে তাদের কাল বিদায় দেবো।
এদিকে দেবীর আগমনিবার্তায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে শহরের দোকানিদের মধ্যে। প্রতিমা সাজানোর জন্য শেষ মুহুর্তে শাখা-সিঁদুর, শাড়ি মুকুট কিনতে বগুড়া শহরের নিউমার্কেট, রাজাবাজার ও চুড়িপট্টি মার্কেটে ভিড় জমাচ্ছেন নারীরা। বেচাকেনাও চলছে সমানতালে।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবীদুর্গা দশদিন ধরে অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। হিন্দু পঞ্জিকার সপ্তম মাসে এই যুদ্ধ শেষে দেবী দুর্গা মহিষাসুর নামে নির্দয় অসুর রাজকে বধ করেছিলেন। যার মাধ্যমে অত্যাচার থেকে মুক্তি মিলেছিল ও অশুভের ওপর শুভ শক্তি স্থাপিত হয়েছিল।
বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলার ১২টি উপজেলায় ৬২৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ১১৭টি, শিবগঞ্জে ৫৩টি, আদমদিঘীতে ৬৩টি, দুপচাঁচিয়ায় ৪০টি, কাহালুতে ২৭টি, নন্দীগ্রামে ৪৫টি, শাজাহানপুরে ৪৮টি, গাবতলীতে ৬৩টি, সোনাতলায় ৩৫টি, শেরপুরে ৮৬টি, ধুনটে ২৮টি ও সারিয়াকান্দিতে ২৩টি মন্ডপে দুর্গার্পজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
বগুড়া পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, পৌর শহরে এবার ৭৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু জায়গায় মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এবারেও প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি এবছর সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হবে।
বগুড়ায় দুর্গাপূজা চলাকালীন নিরাপত্তা বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, প্রতিমা তৈরির শুরু থেকে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। আজ থেকে শহরের প্রতিটি স্পটে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার প্রতিটি পূজার মণ্ডপে আমাদের টিম থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক পাহারা দেবে। এবং পুলিশের বিশেষ কর্মকর্তারা সবসময় মনিটরিং করবে। তিনি আরও বলেন, সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে এবারের দুর্গাপূজা এমনটাই আশা করছেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদযাপনে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়, তৈরি হয় নিরাপত্তার শঙ্কা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সকল মহল থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। আশ্বস্ত করা হয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও। পাশাপাশি শারদীয় এ দুর্গাপূজায় সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।