এম,এ রাশেদ, স্টাফ রিপোর্টারঃ
জেলার চাহিদা মিটিয়ে রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুরসহ দেশের অন্যান্য জেলার পাইকাররা এই ফল কিনে তাদের জেলায় বিক্রি করছে। পানিফল শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও খেতে পছন্দ করেন। আর খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় চাহিদাও বেশি। এই ফল দেখতে সিঙাড়ার মত বলে স্থানীয়ভাবে পানিফলের নাম সিঙাড়া নামেই পরিচিত। এ ফল শীতের শুরুতে বাজারে ওঠে। প্রতিদিন বগুড়া শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে দেখা যায় পানিফল। যে কারণে বগুড়ার খাল-বিল জলাশয় জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে পানিফলের গাছ।
জানা গেছে, বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষি অফিস থেকে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে পতিত জমিতে পানিফল চাষ করেছেন। নিচু পতিত জমি এবং বিল-জলাশয়ে মৌসুমি ফসল হিসেবে পানিফল চাষ হচ্ছে। স্বল্প খরচে অনেকটা লাভবান হওয়ার আশায় কৃষকদের মাছে আগ্রহ বেড়ে গেছে পানিফল চাষের। চাষও যেমন বাড়ছে তেমিন বাজারে এই ফলের দামও ভালো। আর ভালো দাম পেয়ে কৃষরাও খুশি।
কৃষকরা জানায়, গেল বছরের তুলনায় এ বছর বগুড়ায় পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১৪ থেকে ১৫ মণ ফল হচ্ছে। এতে বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি মণ ১ হাজার টাকা দরে কেনাবেচা হয়ে থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে ১৪’শ থেকে ১৬’শ টাকা মন বিক্রি হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা য়ায় গত বছর ২৫ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হলেও এবার ৩৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যা থেকে ৯’শ টন ফল উৎপাদন হবে। জেলার গাবতলী, শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় পানিফল চাষ হয়ে থাকে।
পানিফল চাষী আবু বক্কর জানান, আমরা ৩ জন মিলে এ বছর ১৪ বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছি। ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১৯৫ মণ ফল পেয়েছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা।
কৃষকদের দাবি, যেসব কৃষক পতিত জমিতে পানিফলের চাষ করে তারা সরকারিভাবে সহযোগিতা চান। সরকারি সহযোগিতা পেলে পানিফল চাষ আরো বেড়ে যাবে। এটা লাভজনক ফসল। সরকার ও কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি পতিত জমি চাষাবাদযোগ্য হবে। প্রতি বিঘা জমিতে এই ফসল চাষ করতে খরচ হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর ফল বিক্রি করে আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। অল্প টাকা খরচ করে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের আবদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. এনামুল হক জানান, এবার বগুড়ায় ৩৬ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। যা থেকে ৯’শ টন ফল উৎপাদন হবে। পানিফল বা সিঙাড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় বগুড়া সদর ও গাবতলী উপজেলাসহ জেলার অন্যান্য উপজেলায় আগের চেয়ে চাষাবাদ বেড়ে গেছে। অন্য ফসলের চেয়ে পানিফল চাষে কষ্ট কম হয়। কীটনাশক ও সার কম ব্যবহার হওয়ায় এটি পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার। পানিফল শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও খেতে পছন্দ করেন। আর খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় চাহিদাও বেশি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বর্তমানে বগুড়া জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় বিক্রি করা হচ্ছে এই পানিফল।
তিনি আরো জানান, কৃষিতে পানিফল নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। এটি যেকোনো পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের উৎসাহ ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে।