এম,এ রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
বগুড়ার শাজাহানপুরে ইমামতি নিয়ে দ্বন্দ্বে ঈদগাহ মাঠে মমতাজুর রহমান (৭০) নামে একজন মাত্র মুসল্লি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন।
উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের পারতেখুর গ্রামের পুরাতন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ওই মুসল্লি হলেন পারতেখুর সরদারপাড়ার একজন খেটে খাওয়া ব্যক্তি।
একজন কেন এভাবে নামাজ আদায় করলেন―বিষয়টি জানার জন্য ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই মুসল্লির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্নু জানান, ঈদগাহ মাঠের ইমামতি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এবার ওই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু মমতাজুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি নিজের মাঠের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে মনে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে একাই ঈদের নামাজ আদায় করেন। মমতাজুরের বক্তব্য, কেউ এই মাঠে নামাজ আদায় না করলেও তিনি নিজের মাঠ ছাড়া অন্য কোনো মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করবেন না। প্রয়োজনে প্রতিবছর তিনি একা একাই নামাজ আদায় করবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে পারতেখুর পূর্বপাড়া পারতেখুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠটি নির্মিত হয়েছে। পারতেখুর পূর্বপাড়ার মৃত কছের আলীর দুই ছেলে আব্দুল মান্নান এবং মৃত আব্দুল হালিম ওই মাঠের জন্য জমি দান করেন। প্রায় তখন থেকেই ডা. আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তি ওই মাঠে ইমামতি করে আসছিলেন। যিনি স্থানীয়ভাবে মান্নান পীর নামে পরিচিত।
দুই-তিন বছর আগে গ্রামের একটি পক্ষ মান্নান পীরের ইমামতিতে নামাজ আদায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে মান্নান পীরের পক্ষে আশেকপুর সিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক, জমিদাতা আব্দুল মান্নানসহ পীরের মুরিদরা এক পক্ষে অবস্থান নেয় এবং পারতেখুর সরদারপাড়ার মৃত আনসার আলী সরদারের ছেলে খোকা মিয়া ও তাঁর ভাই সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম এবং মাওলানা আব্দুর রশিদসহ গ্রামের অপর একটি পক্ষ তৈরি হয়। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে খোকা মিয়ার পক্ষ পারতেখুর সরদারপাড়ার ভেতরে নতুন আলাদা একটি ঈদগাহ মাঠ নির্মাণ করে পুরাতন মাঠ ত্যাগ করে এ বছর থেকেই সেখানে ঈদের নামাজ আদায়ের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এমতাবস্থায় ইউপি সদস্য নান্নু, সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম, ইনসান আলী টুকুসহ গ্রামের তৃতীয় একটি পক্ষ ঈদের এক দিন আগে গতকাল বুধবার রাতে মান্নান পীরের পক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন।
সেখানে তৃতীয় পক্ষ প্রস্তাব করে, তারা মান্নান পীরের ইমামতিতে নামাজ আদায় করবে না। তারা নিজেরা আগে প্রথম জামায়াতে নামাজ আদায় করবে। যারা মান্নান পীরের ইমামতি নামাজ আদায় করতে চায় তারা পরে দ্বিতীয় জামায়াতে নামাজ আদায় করলে করতে পারে। কিন্তু ওই বৈঠকে কোনো পক্ষই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে মান্নান পীরের পক্ষ ওই মাঠ ত্যাগ করে মান্নান পীরের প্রতিষ্ঠিত হাফেজিয়া এতিমখানা মাদরাসা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করে। অপরদিকে তৃতীয় পক্ষের লোকজন দ্বিতীয় পক্ষের নতুন মাঠেও যায়নি এবং পুরাতন মাঠেও নামাজ আদায় করেনি। গ্রামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পাশের খরনা ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করে। পারতেখুর গ্রামের এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় আশপাশের মানুষেরা যেমন নিন্দা জানাচ্ছেন, তেমনি বিষয়টি নিয়ে দিন দিন উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্নু ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একমাত্র মান্নান পীর নাছোড়বান্দা হওয়ার কারণেই গ্রামের মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নান পীরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে মান্নান পীরের মুরিদ, মাঠের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার আব্দুল মোত্তালেব জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই মাঠে ঈদের জামাত করা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই মান্নান পীরের ইমামতিতে মাদরাসা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।